বিজ্ঞান উত্তর - Answers to my Evolutionist Friends  ·   by Thomas F. Heinze

বিজ্ঞান উত্তর - Answers to my Evolutionist Friends
কে কাঠঠোকরা পাখীর নক্শা তৈরী করেছিলেন
by Thomas F. Heinze


ডঃ. লুথার স্যান্ডারল্যান্ড ছিলেন নক্শা তৈরীর এক দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার। তিনি এক অরণ্যে সম্প্রতি মারা যাওয়া এক কাঠঠোকরা পাখীর কঙ্কাল পেয়ে সেটা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছিলেন। এর হাড়গুলোকে পোকামাকড়ে সুন্দরভাবে পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছিল। কঙ্কালটি পরীক্ষা করার সময় তিনি একটা খুবই আশ্চর্য বিষয় লক্ষ্য করেছিলেন: কাঠঠোকরা দক্ষিন দিকে নাসিকার কাছে কতগুলো ক্ষুদ্র নমনীয় হাড় ছিল, যে হাড়গুলো এর মাথা এবং গলার পেছন দিকে চক্রাকারে যুক্ত ছিল এবং হাড়গুলো এর মাথার অন্য দিকের ঠোঁটের কাছে চরে গেছে। এই আশ্চর্য হাড়গুলো কি ছিল? ঠিক এরকমভাবে অনেক পশুরই হাড় আছে যা তাদের জিহ্বার মূল অংশকে শক্ত করে এবং কাঠঠোকরার জিহ্বার ক্ষেত্রে এটা অপরিহার্য ভাবে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য সম্পাদন করে (এই হাড়টিকে হাইয়োইড বোনস্ বলা হয়)। যাই হোক, কাঠঠোকরার ক্ষেত্রে বিষয়টা ব্যতিক্রমী। তাদের জিহ্বা পিছন দিক থেকে শুরু হয় এবং মাথার পিছন দিকে চক্রাকারে থাকে!


     কাঠঠোকরার জিহ্বা

কাঠঠোকরা তার জিহ্বার দ্বারা এদের খাদ্য ধরে এবং এদের জিহ্বার প্রান্তে কন্টকযুক্ত এবং কিছুটা আঠা জাতীয় পদার্থ থাকে, যার দ্বারা তারা গাছের ক্ষুদ্র গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকা পোকামাকড় ধরতে পারে। মাথার চারিদিকে চক্রাকারে থাকার ফলে এবং ঠোঁটের আলগা ত্বকের নীচে থাকার ফলে এদের জিহ্বা যথেষ্ট লম্বা হতে পারে এবং প্রায় ছয় ইঞ্চি দীর্ঘ জিহ্বাকে চকিতে বের করে গাছের কান্ডের গর্তের মধ্যে থাকা পোকামাকড় ধরতে পারে!

কোনও কিছু অথবা কোনও ব্যক্তি কাঠঠোকরার ঠোঁটে এক অনুপম নক্শা দান করেছিলেন। এটা দীর্ঘ, জিহ্বাটি নীচের দিকে ঝুলতে থাকলেও এবং উড়তে থাকে তখন গাছের শাখার চারিদিকে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকলেও, এর আলগা অংশটি গলার পশ্চাত দিকের শিথিল ত্বকের নিচের দিকে রাখা থাকে। এর ঠিক পশ্চাতেই, ক্ষুদ্র হাড়গুলো দুটি অত্যন্ত অপরিহার্য জিহ্বায় বিভক্ত হয়, ঠোঁটে প্রবেশ করার পূর্বে তারা এক সাথে পেছনে ফিরে আসে। কাঠঠোকরা যখন তার খাদ্যের লক্ষ্যে জিহ্বা নিক্ষেপ করে, তখন নিঃসন্দেহে তার এই বিস্তারিত নক্শাটি তাকে আরও অধিক নির্ভুল নিশানা দান করে।


(ডান দিকে) কাঠঠোকরার মাথার খুলির মধ্যে
জিহ্বার হাড়গুলোকে দেখানো হয়েছে।

পাতলা এবং নমনীয় ক্ষুদ্র সংযোগ সন্ধিসহ মোট পাঁচটি হাড় আছে। ১ যা তাদের ডানদিকের নাসিকার মাধ্যমে নির্গমন করে এবং সেখানে তাদের রক্ষাকারী আবরণ যুক্ত থাকে, ২ মাথার এবং গলার পশ্চাতের বৃত্ত ৩, এবং দুই অর্ধ ঠোটের খাঁজের (ফাঁপা জায়গায়)মধ্যে ফিরে আসে!৪

     অভিব্যক্তি?

অভিব্যক্তি তত্ত্ব অনুসারে, একক কোষ থেকে জটিল কোষে উত্তরণের প্রতিটি পদক্ষেপ অতি ক্ষৃদ্র পরিবর্তনের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে যে বিষয়টি জীবিত প্রাণীর সরাসরি গঠন প্রাপ্ত হওয়ার তথ্য অনুকরণ করার ভুল থেকে উদ্ভুত হয়েছে। এই ভ্রান্তিকে মিউটেশন নামে অভিহিত করে হয়েছে, অভিব্যক্তিবাদীরা যাকে দুর্ঘটনা বলে থাকেন। অর্থাৎ, তারা বলতে চান যে ঈশ্বরের কর্তৃক কোন প্রজ্ঞাযুক্ত নির্দেশেনার দ্বারা জীবিত প্রাণী সৃষ্টি হয়নি। কোনও জটিল সজীব প্রাণী তৈরীর ক্ষেত্রে তথ্য কপি করার ভ্রান্তি কোনও ভাল নির্দেশ না দিতে পারে না। এই কারণেই যে টেক্নিশিয়ানরা এক্স-রে নিয়ে কাজ করেন তারা নিজেদের লেড শিল্ডস্ অথবা এ্যাপ্রোনগুলো থেকে নিজেদের সুরক্ষিত করেন।

যাইহোক, অভিব্যক্তিবাদীগণ বিশ্বাস করেন যে ব্যাকটেরিয়া থেকে জীববিজ্ঞানীদের অথবা অ্যামিবা থেকে আদমকে এই মিউটেশন ধীরে ধীরে তৈরী করেছে। তারা বিশ্বাস করেন যে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রাকৃতিক মনোনয়ন মিউটেশনের দ্বারা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মনোনীত করেছে যা বিভিন্ন জীবদেহে বেঁচে থাকার জন্য এবং নিজস্ব গোত্র ত্যাগ করে বেড়িয়ে আসার জন্য অল্প অল্প করে সক্ষমতা যোগ করে, যখন ক্ষতিকর মিউটেশনগুলোর মৃত্যু হয়। এই সমস্ত পরিবর্তনগুলো অধিক সময় যাবৎ সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি বিশ্বাস করার কারন হল যে অধিকাংশ মিউটেশন প্রোটিন তৈরীর নির্দেশের মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তনের সুযোগের প্রতিনিধিত্ব করে। এই প্রোটিন হল কোষের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে প্রধান উপাদান। ক্ষুদ্র প্রোটিনগুলো আরও অধিক ক্ষুদ্রতর অ্যামাইনো অ্যাসিডের দীর্ঘ সূত্র দ্বারা গঠিত হয়। প্রায় সমস্ত মিউটেশনই ক্ষতিকর, সুতরাং যে অঙ্গগুলো বেঁচে থাকে সেগুলো সাধারণতঃ সেই সকল মিউটেশন যা একটি অ্যামাইনো অ্যাসিডকে একটি প্রোটিনে পরিবর্তিত করে।

জিহ্বার মতো একটি অতি সরল অঙ্গও অসংখ্য প্রোটিন, স্নায়ুকোষ, রক্ত জালিকা ইত্যাদি বিষয় দ্বারা গঠিত, যে বিষয়গুলোর মধ্যে যথাযথ সমন্বয় থাকা আবশ্যক, সুতরাং একটি অ্যামাইনো অ্যাসিডের একটি প্রোটিনে পরিবর্তিত হয়ে একটি অঙ্গের অস্তিত্ব লাভ করার বিষয়টা কল্পনা করা খুবই কঠিন। সুতরাং একটা বড় মিউটেশনগুচ্ছ একবারেই হাড়, পেশী, স্নায়ু, ইত্যাদি গঠনে প্রভাবিত করেছিল বলে কেন দাবী করা যাবে না? যেহেতু প্রায় সমস্ত মিউটেশনই ক্ষতিকারক, সেহেতু আপনি যদি এক হাজার মিউটেশনের একটি গুচ্ছ লাভ করেন এবং তাদের মধ্যে একটি মিউটেশন যদি সহায়ক হয়, তবে তাদের মধ্যে কয়েকশত মিউটেশন জিন সংক্রান্ত রোগের কারণ হবে, যা অঙ্গ-প্রতঙ্গকে শেষ করে দেবে। ঈশ্বর কিছুই করেন নি এবং দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বিভিন্ন মিউটেশন সমস্ত কিছু উৎপন্ন করেছে বলে প্ররোচিত করার মাধ্যমে, অভিব্যক্তিবাদীরা নিজেদেরকে একটা কোনায় চিত্রিত করেছেন, তাদের কাছে কোন জটিল অঙ্গের উৎস সম্পর্কে কোনও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নেই।

অভিব্যক্তিবাদীরা অনুমান করেন যে কাঠঠোকরার পাখী অবশ্যই একটি সাধারণ জিহ্বাযুক্ত কোন অন্য পাখীর থেকে বিবর্তিত হয়েছে যার জিহ্বা ঠোঁট থেকে সোজা বাইরে গেছিল। যাই হোক, মিউটেশন দৃশ্যাবলী কখনও একটা সাধারণ পাখীর ঠোঁটকে একটা কাঠঠোকরা পাখীর ঠোঁটে বিবর্তিত করতে পারে না। কেন? একটি সাথারণ পাখীর ঠোঁট চারিদিকে ঘুরে থাকে এবং এর মাথার দিকে চামড়ার নীচে বৃদ্ধি লাভ করতে থাকে, যতক্ষণ না এটা একটা সম্পূর্ণ বৃত্ত বা চক্র সম্পূর্ণ করে ততক্ষণ এটা সম্পূর্ণ রূপে ব্যবহারের অযোগ্য থাকে। কেবলমাত্র কাঠঠোকরার ঠোঁটের বিবর্তনের শেষ পর্যায়, যখন ঠোঁটটা আবার পেছন দিক থেকে সামনে বেড়িয়ে আসে তখনই এর টিকে থাকার গুরুত্ব থাকে।

নাসিকার মধ্যে থেকে জিহ্বাটা বেড়িয়ে আসার পর এবং মাথার পশ্চাতে পেছনের দিকে অগ্রসর হয়ে যতক্ষণ না জিহ্বা এবং এর হাড়গুলো গলার চারিদিকে, পশ্চাৎ দিকে অবস্থিত এর ঠোঁটের আরম্ভ স্থলের দিকে, যথেষ্ট দীর্ঘ না হয় এবং খাদ্যের কাছে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট দূরে প্রসারিত না হয়, ততক্ষণ এটা পাখীটাকে টিকে থাকার বিষয়টা একটা বড় অসুবিধা দান করে। যেহেতু, এর সঙ্গে হাড়, সন্ধিস্থল, রক্ত জালক, স্নায়ু এবং মাংস যুক্ত থাকে, সেহেতু এর জন্য অসংখ্য মিউটেশন প্রয়োজন, যা বিনা বিচারে ধরে নেওয়া যায় যে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রসারিত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এর জিহ্বা একে কোনও খাদ্য ধরতে সাহায্য করতে পারত না, যতদিন না এটা একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে একেবারেই একটি প্রোটিনে পরিবর্তিত হওয়ার দ্বারা মাথার পশ্চাৎ দিকের চারিদিকে একটি চক্র সম্পূর্ণ করেছিল। বেঁচে থাকার সংগ্রামে সাধারণ পাখীদের তুলনায় কাঠঠোকরা পাখীকে খাদ্য সংগ্রহের জন্য জিহ্বাকে আলগা করার বিষয়টা অনেক বেশি অসুবিধা সৃষ্টি করেছিল। এটা যতদিন ভুল দিকে বৃদ্ধি পাচ্ছিল ততদিন দুটি হাড়ের এবং এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্য যুক্ত হওয়ার বিষয়টা কাঠঠোকরার ক্ষেত্রে এক নতুন টিকে থাকার সুবিথা যোগ করেছিল। সেই জন্যে এই ধরণের মিউটেশনকে কখনও সংরক্ষিত করা হয়নি।

একটি জটিল নক্শার উৎপাদিত বিষয় হিসাবে এক বারেই কাঠঠোকরার জিহ্বা সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য নিশ্চিত ভাবে এক প্রজ্ঞাময় সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন হয়েছিল। কাঠঠোকরার জিহ্বা যদি পরিকল্পিত না হয়ে আকস্মিক মিউটেশনের ফলে গঠিত হতো, তবে এর ডান দিকের নাসিকা থেকে এটা বের হয়ে যদি পশ্চাৎ দিকে যেতো তবে কাঠঠোকরা পাখীর প্রজাতিকে হয়তো অনাহারে মারা যেতে হতো।

অভিব্যক্তিবাদীদের মতে কোনও প্রাণীর যদি কোনও একটি অঙ্গ কয়েক প্রজন্ম ধরে অব্যবহৃত থাকে তবে সেই প্রাণীটি জীবিত থাকলেও তার সেই অঙ্গটি নিজে থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। যদি কোন আশ্চর্য কারণ বশতঃ কাঠঠোকরা পাখী বিলুপ্ত না হয়ে থাকে, তবে কয়েক প্রজন্ম অব্যবহৃত থাকায় এর জিহ্বাটি অবশ্যই বিলুপ্ত হয়ে যেত। কাঠঠোকরার ঠোঁট আমাদের কাছে একটি শক্তিশালী প্রমাণ যে এটা এক বুদ্ধিযুক্ত- পরিকল্পনা এবং সৃষ্টির ফসল, এটা কোন বিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয় নি। কিছু সংখ্যক অভিব্যক্তিবাদীরা এই বিষয়টা উপলব্ধি করেছেন, এবং তারা কিভাবে এই বিবর্তন সম্ভব হতে পারে সেই বিষয়ে একটা অন্য গল্প চিন্তা করেছেন। আমাকে যখন এই বিষয়টা প্রথম ই-মেলে বলা হয়েছিল, এটা তখন এতো অধিক অসম্ভব পরামর্শ ছিল যে আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমি এটা বুঝতে পারবো না, সেই ব্যক্তি কি বলতে চাইছেন সেটা যতক্ষণ না আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছিল ততক্ষণ আমি তাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলাম।

এই অভিব্যক্তিমূলক অনুমান দাবী করে যে সাধারণ পাখীর ঠোঁট থেকেই কাঠঠোকরার এই জিহ্বা বিবর্তিত হয়েছে: গলার পশ্চাৎ দিকে প্রোথিত হয়ে অন্য পাখীদের মতোই ঠোঁটের মধ্যে দিয়ে বাইরের দিকে সোজা ভাবে প্রসারিত হয়েছে। তারপর জিহ্বার বিষয়টা সেখানেই শেষ হয়ে যায় নি, মূল উৎপত্তি স্থানটি অল্প অল্প করে গলার পশ্চাৎ দিক থেকে তার স্বাভাবিক সংযোগ স্থল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং ধীরে ধীরে অতি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ ঠোঁটের পেছন দিকের মুক্ত স্থান থেকে বাইরের দিকে এসেছে এবং মাথার পিছন দিকের চারিদিকে আরও দূরে সংযুক্ত হয়েছে বা মূল বিস্তার করেছে। এইভাবে, কাহিনী অনুসারে, প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ প্রাকৃতিক মনোনয়ন দ্বারা অনুকূল্য লাভ করেছিল কারণ জিহ্বা বিস্তার করে পোকামাকড় ধরতে সক্ষম হয়েছে। এটা অবশ্যই দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের মিউটেশনের অনুকূলে ঘটে, মিউটেশন দুটোর মধ্যে কমবেশি সিদ্ধ সমন্বয় থাকে: যে মিউটেশনগুলোকে মূলকে মাথার চারিদিকে গতিশীল করে, সেগুলো জিহ্বার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিকারী মিউটেশনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে থাকতে পারে। অন্যথা, জিহ্বা যদি আরও পশ্চাৎ দিকে যেতো, তত কম জিহ্বা ঠোঁটের প্রান্তে পৌঁছাতে পারতো, তত কম এটা বাইরে প্রসারিত হতো। এটা তাহলে টিকে থাকার জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করতো। সত্য ঘটনা হলো কমবেশি সমন্বয় সাধনকারী মিউটেশনগুলো এই গল্পটিকে কিছুটা হলেও সত্য প্রতিপন্ন করতে প্রয়োজনীয় হয়ে থাকতে পারে।

যাইহোক, আমি যখন এই দৃশ্যাবলী চিন্তা করছিলাম, তখন আমি ভাবছিলাম যে অভিব্যক্তিবাদের তত্ত্বে এত বিশ্বাসী একজন অভিব্যক্তিবাদীর পক্ষে এটা চিন্তা করা কিভাবে সম্ভব হতে পারে যে বিশ্বাস করে যে এ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত মিউটেশনের ক্রিয়ায় প্রাকৃতিক বাছাইয়ের দ্বারা সমস্ত কিছু অস্তিত্ব লাভ করেছিল। মোটের ওপর যদি একটা জিহ্বা ক্রমশঃ আরও বড় হয়ে ঠোঁটের বাইরে বেরিয়ে আসতো, তবে সেটা বাস্তবিক গাছের কোটরের আরও দূরে পৌঁছাতে পারতো, এবং তা গর্ত থেকে আরও অধিক পোকামাকড় ধরতে পারতো, যার ফলে তাদের বাচ্চারা আরও অধিক পরিপক্ক হতে পারতো।

তারপর বিষয়টা আমাকে বিশেষ ভাবে নাড়া দেয়! এই তত্ত্বটা প্রথম ইঞ্চির জন্য অথবা সেই বৃদ্ধির জন্য ভুল অভিমুখে জিহ্বার উৎপত্তি স্থলের মূলে চালিত হওয়ার বিষয়টা উল্লেখে অবহেলা করা হয়েছে। অভিব্যক্তিবাদীরা বর্ণনা করেছেন যে কাঠঠোকরার ঠোঁট অন্য পাখীদের মতো গলার পিছন দিক থেকে শুরু হয়েছিল, কারণ তারা দাবী করেছিল যে এটা কিছু সংখ্যক সাধারণ পাখী থেকেই বিবর্তিত হয়েছে। জিহ্বার মূল আরম্ভ হওয়ার একমাত্র পথ, যেখান থেকে এটা ঠোঁটের পাশের দিক থেকে বের হতে পারে, সেটা হল গলার পেছন দিকের স্থান থেকে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া। এর প্রথম ইঞ্চি সামনের দিকে চালিত হওয়ার বিষয়টা মনোনীত হওয়ার সুযোগটা কমে যাবে।

অন্য দিক থেকে বলা যায় যে সামনের দিকে চালিত হওয়ার বিষয়টা যদি জিহ্বার অধিক অংশকে ঠোটের বাইরে আসতে সাহায্য করে এবং এর টিকে থাকার সুযোগকে বৃদ্ধি করে, তবে পশ্চাৎ দিকে চালিত হওয়ার বিষয়টা এর টিকে থাকার বিষয়টাকে হ্রাস করবে। সুতরাং, অবাধ বিতর্ক প্রমাণ থেকে বলা যায় যে প্রথমে মাথার চারিদিকের পরযায়ী মূল দ্বারা আজ কাঠঠোকরার জিহ্বা যে অবস্থায় পরিণত হয়েছে সেই বিষয়ে অভিব্যক্তিবাদীদের মতামত স্ববিরোধী এবং ত্রুটিপূর্ণ।

এটা আরও খারাপ অবস্থা লাভ করে। এই তত্ত্ব অনুসারে গলার চারিদিকে এটা কাজ করার পর মূল নাসিকার মাধ্যমে ঠোঁটের মধ্যে দিয়ে এর পেছন দিকে একত্রিত হয়েছিল। কেন এটা এরকম করবে? যদি জিহ্বার দীর্ঘতা পাখীটিকে টিকে থাকার সুযোগকে বৃদ্ধি করে, তবে চামড়ার মধ্য দিয়ে নীচের দিকে পাকস্থলী, লেজ অথবা পায়ের দিকে চালিত হওয়ার দ্বারা যে সমস্ত পাখীর জিহ্বা অনবরতঃ দীর্ঘ হতে থাকে তা অবশ্যই প্রাকৃতিক মনোনয়ন দ্বারা মনোনীত হয়েছে। যে পাখীদের জিহ্বা অর্ধ পথ অতিক্রম করে থেমে গেছে এবং নাসিকার মাধ্যমে ঠোঁটের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়ে পশ্চাৎ দিকে দলা পাকিয়ে গেছে তা বাদ হয়ে যাবার কথা।

সম্মুখ দিকের এবং পশ্চাৎ দিকের এই অভিব্যক্তি সংক্রান্ত দৃশ্যাবলী অবাস্তবতার প্রতি পরিচালিত করে এবং প্রাকৃতিক বাছাই দ্বারা বাদ দেওয়ার প্রতি পরিচালিত করে। কাঠঠোকরার ঠোঁট একটি পরিকল্পিত নক্শার শক্তাশালী প্রমাণ।

     অনন্য দৈহিক গঠনতন্ত্র

কাঠঠোকরার ঠোঁট একটি বিশিষ্ট বাটালির মত কাজ করে, একটি গাছের অভ্যন্তরে সঠিক স্থান কাটতে সক্ষম হয়। একটি ইস্পাতের বাটালির উপর হাতুড়ি দ্বারা আঘাত করে যেভাবে গাছ কাটা যায়, একটি কাঠঠোকরা পাখী ঠোঁটের দ্বারা সেই কাজ করে। যাইহোক, আমাদের ইস্পাতের বাটালিও ভোঁতা হয়ে যায়। কাঠের মধ্যে বেশ কতগুলো গর্ত করার পর আমাদের বাটালিতে ধার দিতে হয়। অন্যথায় সেই বাটালিগুলো সম্পূর্ণ অকেজো না হওয়া পর্যন্ত ক্রমাগত ভোঁতা হতে থাকে। ঈশ্বর কাঠঠোকরার ঠোঁটকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ধারালো তৈরী করেছেন। এটা যদি ক্ষুদ্র দুর্ঘটনাজনিত কতগুলো পরিবর্তনের দ্বারা একটি সাধারণ বিষয় হতো, তবে কোনও কামার, অথবা কোন ধাতু বিশারদ বৈজ্ঞানিক নিশ্চয় ইস্পাতের বাটালিকে কিভাবে নিজে থেকে ধারালো করা যায় সেই বিষয়টা খুঁজে বের করতেন।

যদি একটা মানুষ একটা কাঠঠোকরার মতো গাছের কান্ডের মধ্যে থেকে পোকামাকড় ধরার চেষ্টা করতো, তবে তার বাটালি যতই তীক্ষ্ণ থাকুক না কেন, সে কখনই জানতো না যে গর্তের ভিতরে কোন দিকে বাটালি চালনা করলে সে সেই পোকামাকড় গুলোকে ধরতে পারবে। যতক্ষণ না প্রকান্ড বৃক্ষের ক্ষুদ্র গর্তের মধ্যে কোথায় পোকামাকড় আছে তা নির্ণয় করার মতো এবং সেই অতি ক্ষুদ্র পোকামাকড়কে ধরার মতো জটিল গঠন লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল, ততক্ষণ এর বিশেষ জিহ্বার কোন মূল্য ছিল না। সেই পোকার কাছে পৌঁছানোর মত লম্বা জিহ্বা ছাড়া পোকার অবস্থান নির্ণয়কারী গঠনেরও কোন মূল্য ছিল না। বাস্তবিক, জিহ্বাতে যদি পোকা আটকানোর মতো এবং সেই পোকার অবস্থান জানার মতো গঠনেরও কোনও মূল্য থাকতো না। এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে কোনও একটি যদি আগে বিবর্তিত হতো তবে এর কোন কার্যকারিতা থাকতো না এবং এটা মনোনীত হতো না।

যদি উপরোক্ত সমস্ত গঠনতন্ত্রগুলো একটা সাধরণ পাখীর মধ্যে আসতো, তবে গাছের সঙ্গে আঘাতে এটা নিহত হতো; এটা অনেকটা কোনও একচন ব্যক্তির তার নাকের ডগা দিয়ে গাছের মধ্যে একটা ইস্পাতের বাটালি চালনা করা মতো অবস্থা। প্রথম আঘাতে কি এটি টিকে ছিল, সম্ভবতঃ প্রথম আঘাতের পরেই সে সমস্ত চেষ্টা ত্যাগ করতো। কাঠঠোকরা কেবলমাত্র নিজে থেকে তীক্ষ্ণকারী একটি শক্তিশালী ঠোঁট নিয়ে এবং পোকার অবস্থান নির্দেশক গঠন নিয়েই আসেনি, কিন্তু তার মধ্যে আঘাত সহ্যকারী অথবা শোষণকারী একটি আশ্চর্য গঠনতন্ত্রও ছিল যা যে কোন ক্ষতি থেকে এর মস্তককে রক্ষা করে। কাঠঠোকরার মধ্যে যদি আঘাত সহ্য করার মতো ব্যবস্থা না থাকতো, তবে প্রথম কাঠঠোকরার গাছের মধ্যে গর্ত করার দৈহিক গঠনের বিবর্তন পরিত্যক্ত হতো অথবা মারা যেতো।

অন্য পাখীদের সঙ্গে তুলনা করে আরও বলা যায়: “কাঠঠোকরার লেজের পালক (বিশেষ করে কেন্দ্রীয় পালকটি অথবা দুই জোড়া পালক) অন্য পাখীদের তুলনায় অনেক শক্তিশালী, ঠোঁট দিয়ে ঠোক্কর মারার সময় এই শক্তিশালী লেজ কাঠঠোকরার দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে পতনকে প্রতিরোধ করে। এর পায়ের আঙ্গুলের গঠন এবং এর সঙ্গে যুক্ত কন্ডরা এবং পায়ের মাংসপেশীগুলো যে জটিল কার্যকর গঠন তৈরী করে তা কাঠঠোকরাকে গাছের বড় বড় কান্ডে উঠতে সক্ষম করে এবং গাছ ঠোকরানোর সময় সঠিক অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করে।” (এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা সিডি ৯৮, “বার্ডস্: মেজর বার্ড অর্ডারস্: পিসিফরমস্, ফর্ম এবং ফাংশন”)। যদি কয়েকটা গর্ত করার পর ঠোঁট ভোঁতা হয়ে যেতো এবং আর গর্ত করতে পারতো না, তবে শক্ত লেজের পালকগুলো, বিশেষ পায়ের আঙ্গুলের গঠন, পোকার অবস্থান নির্ণায়ক ব্যবস্থা এবং চারিদিকে জড়ানো জিহ্বার সঙ্গে পোকা টেনে বের করার ব্যবস্থা এবং আঘাত সহ্য করার বিশেষ তন্ত্রগুলো কি কাজে দিতো? কোনও একটি বিষয় কার্যকরী হওয়ার পূর্বে যদি এক সঙ্গে সমস্ত তন্ত্রগুলোকে সঠিক স্থানে একবারে স্থাপন করা হয়, তখন তাকে জটিলতা হ্রাস করার অসাধ্য (ইরিডিস্যাবল্) বলে অভিহিত করা হয় এবং এটা একটা বুদ্ধিযুক্ত নকশার প্রমাণ।

     উপসংহার

অভিব্যক্তিবাদের তত্ত্ব অনুসারে, কার্য ছাড়া যে কোন গঠনতন্ত্র প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা বাদ হয়ে যায়। যদি একটি কাঠঠোকরার সমস্ত তন্ত্রগুলোর মধ্যে কোনও একটি তন্ত্র অন্য যে তন্ত্রগুলোর সেখানে কাজ করার কথা ছিল, সেই তন্ত্রগুলো থেকে অনেক পূর্বে বিবর্তিত হতো, তবে সেই অবিবর্তিত তন্ত্রগুলো বাদ হয়ে যেতো। এই প্রমাণটি আকস্মিক মিউটেশনের দ্বারা কাঠঠোকরার বিশিষ্ট তন্ত্র সৃষ্টি হওয়ার যুক্তিটির সম্পূর্ণ বিরুদ্ধ কারণ আরও অসংখ্য তন্ত্রগুলোকে একত্রে কাজ করতে হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব হল সমস্ত তন্ত্রগুলোই উপস্থিত আছে এবং কাজ করে চলছে যা নির্দেশ করে যে এই বিভিন্ন তন্ত্রগুলো এক সঙ্গে কাজ করার জন্য পরিকল্পিত এবং সৃষ্ট।

যেহেতু প্রমাণগুলো নির্দেশ করে যে কাঠঠোকরা এলোমোলো কতগুলো মিউটেশনের দ্বারা তৈরী হয়নি, সেহেতু অধিকাংশ অভিব্যক্তিবাদীদের প্ররোচনা অনুযায়ী কেন আমরা মেনে নেব যে প্রত্যেকটি জীবিত প্রাণীর প্রত্যেকটি অংশের সার্বজনীন নির্মাণকারী হল মিউটেশন? যখন উত্তম প্রমাণ আমাদের এই উপসংহারের প্রতি পরিচালিত করবে যে মিউটেশনের ফলে বিভিন্ন বিষয়গুলো অস্তিত্ব লাভ করেছে, তখন আমাদের এই তত্ত্ব বিশ্বাস করা যুক্তিসঙ্গত। জিনগত অধিকাংশ রোগই এর উদাহরণ। প্রোটিনের মধ্যস্থ অ্যামাইনো অ্যাসিডের অতি ক্ষুদ্র পরিমান পরিবর্তন কার্যকরী প্রোটিনকে প্রায়ই একটি ব্যাধির প্রতিটি পরিচালিত করে। কিন্তু কাঠঠোকরার ক্ষেত্রেও আমরা এই প্রমাণটিকে একটি পথপ্রদর্শক রূপে ধরে নিতে পারি যেখানে প্রমাণগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে একটি অত্যন্ত বুদ্ধিযুক্ত নকশার বা পরিকল্পনার বিষয় নির্দেশ করে। কেন আমরা এই উপসংহারে ঝাঁপ দেব যে মিউটেশন যদি ডায়বেটিসের কারণ হয়, তবে তারা অগ্নাশয়, যকৃত, মাছ, বাঁদর এবং আমাদের গঠনও তৈরী করেছে? আপনি যদি কোনও ব্যক্তিকে একটি ধ্বংসকারী বল ‘রেকিং বল’ যুক্ত ক্রেন দ্বারা একটা বিল্ডিংকে আঘাত করে দেখেন, আপনি নিশ্চয় এটা ধরে নেবেন না যে ‘রেকিং বল’ যুক্ত ক্রেন দ্বারা পৃথিবীর সমস্ত বিল্ডিং নির্মিত হয়েছে।

দুর্ভাগ্যবশতঃ অসংখ্য লোকের কাছে অভিব্যক্তি সংক্রান্ত বিশ্বাসটা একটা সামগ্রিক ধর্মীয় পরিকাঠামোর অংশ, যেখানে সমস্ত কিছু অবশ্যই ঠেসে ঢুকাতে হবে, সেটা তার মধ্যে মানানসই হোক অথবা না হোক।

ছবিতে প্রদত্ত মাথার খুলির মালিক, ডাঃ.স্যান্ডারল্যান্ড লিখেছেন, “সম্ভবতঃ লেখকদের পাঠাগার যে কোনও বই অপেক্ষা কাঠঠোকরার মাথার খুলি বৈজ্ঞানিকদের অভিব্যক্তিবাদ তত্ত্বের অপর্যাপ্তার বিষয়ে আরও ফলপ্রসূ ভাবে সন্দেহ নিরসন করেছে। অন্য পাখীদেরও ‘হাইয়োইড বোনস্’ আছে, কিন্তু তাদের বাম নাসিকার মধ্যো মূল বিস্তার করার জন্য কোনও এক ধরণের অলৌকিক কার্যের প্রয়োজন। এক প্রখ্যাত অভিব্যক্তিবাদী এই বিষয়টি পরীক্ষা করার পর এক অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বিজ্ঞান সংক্রান্ত পত্রিকার কর্মীর কাছে তাঁর গোপন কথা ব্যক্ত করেছিলেন, “কিছু অঙ্গের গঠনতন্ত্র সংক্রান্ত আকৃতির বিষয় লক্ষ লক্ষ বছর যাবৎ ক্রমাগত মিউটেশন দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। শুধু আপনার এবং আমার মধ্যে, আমি কিছু সময় কাজের মধ্যেও ঈশ্বরকে পেতে চাই।”

আরেকজন বৈজ্ঞানিক যখন মাইক্রোস্কোপের নীচে কাঠঠোকরার জিহ্বার হাড় পরীক্ষা করেছিলেন, তিনি মন্তব্য করেছিলেন, “মানুষের তৈরী এবং ঈশ্বরের তৈরী বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য করা খুবই সহজ। মানুষের তৈরী বিষয়কে আপনি যত বড় করে দেখবেন (বিবর্ধিত), সেই বিষয়গুলো তত বেশি অমার্জিত দেখাবে, কিন্তু ঈশ্বরের তৈরী বিষয়গুলোকে আপনি যত অধিক বিবর্ধিত করবেন, তত অধিক সেই বিষয়গুলো নির্ভুল এবং জটিলরূপে আবির্ভূত হবে।” (লুথার ডি. স্যান্ডারল্যান্ড, ক্রিয়েশনস্ রিসার্চ সোসাইটি কুয়াটর্লী, ভলিউম ১২, মার্চ ১৯৭৬, পৃ.১৮৩) (Luther D. Sunderland, Creation Research Society Quarterly, vol. 12, March 1976, p. 183)


"কে কাঠঠোকরা পাখীর নক্শা তৈরী করেছিলেন"
<http://www.creationism.org/bengali/woodpecker_bn.htm>


     প্রধান:  বাঙ্গালী 
Go to:  www.creationism.org